ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া সুন্দরবনের গোলদিয়া ও চিলখালীরচরে লক্ষাধিক গাছ কেটে চিংড়িঘের, ঝুঁকিতে উপকূলবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপকূলে হঠাৎ করে প্যারাবন উজাড় করে চলছে চিংড়িঘের তৈরির ধুম। গত একমাসে উপকূলের লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে এসব ঘের। অথচ এসব প্যারাবন কক্সবাজার উপকূলের প্রাচীর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে মূল ভূখণ্ডকে রক্ষা করে আসছে। তবে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকায় চিংড়িঘের তৈরির জমির পরিমাণ ১২ হাজার ১১০ একর। এর মধ্যে তিন হাজার ১০১ একর জমিতে অবৈধভাবে এসব চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, উপকূলীয় বন বিভাগের অবহেলা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এসব বন উজাড়ের কাজ চলছে। সম্প্রতি চকরিয়া সুন্দরবনের চরণদ্বীপ মৌজার গোলচর ও চিলখালীর চর এলাকায় দেখা যায়, কয়েক হাজার একর প্যারাবনের লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়াগাছ কেটে সেখানে বিশাল আকৃতির কয়েকটি চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘের পাহারার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ঘর।
এ সময় কয়েকজন পাহারাদার জানান, গত একমাস ধরে তিন শতাধিক মানুষ প্যারাবনে ঢুকে অন্তত দেড় লাখ বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে নিয়েছে। পরে এসব গাছ চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরাই এই প্যারাবন ধ্বংসে নেতৃত্বে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

পাহারাদাররা আরো জানান, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী বড় গাছ কাটা হয়েছে করাত দিয়ে। আর ছোট গাছগুলো পেট্রোল ঢেলে আগুনে ধ্বংস করা হয়েছে। পরে গাছের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে যাতে কেউ প্যারাবনের চিহ্ন দেখতে না পারে। তবে এরপরও সরজমিনে ওই এলাকায় কয়েক হাজার গাছের মূল দেখা গেছে।
জেএমঘাট এলাকার বাসিন্দা আবু নাসের (৫০) বলেন, রাতের বেলায় পরিকল্পিতভাবে পেট্রোল ঢেলে এই প্যারাবন ধ্বংস করা হয়েছে। আগে এই বনে হরিণ, বানর, সাপ ও বকসহ নানা জীব-জন্তু ও পশু-পাখির বিচরণ দেখা যেত। এছাড়া এই প্যারাবন ঘিরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত এলাকার কয়েক হাজার পরিবার।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্যারাবনের লক্ষাধিক গাছ কেটে নিলেও বনবিভাগের ভূমিকা ছিল নীরব। তারা একটি গাছও উদ্ধার করতে পারেনি। এ বিষয়ে কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) গোলাম মর্তুজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে লিজ নেওয়া জমিগুলো যাচাই-বাচাই শেষে অতিরিক্ত জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চকরিয়ায় ১১ মৌজার ৮৯০৯.৫০ একর জমি চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে দখল করে চিংড়ি চাষ চলছে ৩১০১.৫৩ একর জমিতে।

পাঠকের মতামত: